
দিব্যেন্দু ঘোষ, ৯৯ বাংলা নিউজ: কথায় আছে মনের জোর বড়ো জোর। জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ের পথ কারোরই মসৃণ নয়। জীবনে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় সকলকে। তবে কিছু মানুষের জীবন সংগ্রাম দৃষ্টান্ত তৈরি করে দেয়। এই যেমন রাহুল, বছর ২০ রাহুল চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা। ছোট বেলা থেকেই স্নায়ুবিক সমস্যার জন্য বিশেষ ভাবে সক্ষম সে। তার হাঁটার ধরন ও কথা বলা সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা। তবে সে যে অসাধারণ তার প্রণাম রাহুলের কর্ম।
পরিবারে মা বাবা ও বোন কে নিয়ে মোট ৪ জন। ছোট্ট টালির ঘর। বাবা পেশায় একজন দিন মজুর। এই বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে রাহুল। তবে বাড়িতে বসে থাকলে তাদের আর পেতে ভাত উঠবে না। তাই বিকেল হতে না হতেই মা কে সঙ্গে নিয়ে রাহুল বেরিয়ে পড়ে চায়ের দোকান খুলতে। শুধু তাই নয় তার সঙ্গে স্কুলের ব্যাগে ভর্তি করে নিয়ে নেয় বাদামের পকেট। সন্ধ্যা হতেই শুরু হয় তার হকারি। এত কিছুর পরেও নিজের পড়াশোনা ও বোনের পড়াশোনার জন্য রসদ সে নিজেই উপার্জন করছে।
রাহুলের মা জানান, ছোট থেকেই রাহুলের স্নায়বিক সমস্যার জন্য সে বিশেষ ভাবে সক্ষম। তাদের পরিবারের এত সামর্থ ছিল না যে ছেলের ভাল করে চিকিৎসা করবে। তবে তাদের ছেলে যে এই বয়সেই সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে হল ধরেছে সংসারের। নিজের পড়াশোনা বোনের পড়ালেখা সবেরই দায়িত্ব এখন রাহুলের কাঁধে।
রাহুলকে প্রশ্ন করা হলে যে জানান, তার একটি ছোট্ট একচালা ভাড়া বাড়িতে থাকে। দরমার ঘর মাথায় টালির চাল। রাহুলের ইচ্ছা সে কখনো জমি কিনেন নিজের একটা বাড়ি বানাবে। সেখানে মা বাবা বোনকে নিয়ে খুব আনন্দের সঙ্গে থাকবে সে। তাই জন্যেই সে এখন থেকে তিল তিল করে একটা একটা করে টাকা জমাতে শুরু করেছে। তার ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শিখেছি কখনো রেলে চাকরি করবে। তবে পড়াশোনা কতদূর হবে? তা নিয়ে এখন বেশ দুশ্চিন্তায়। তবুও নিজের পড়াশোনা কে কোনদিনও পিছনে রাখতে চাইনি রাহুল। এই বছর আবারও উচ্চমাধ্যমিক থেকে আগামী বছর কলেজে জয়েন করবে। সংসারের হাল ধরতে এখন থেকেই সে প্রস্তুত।
প্রতিবন্ধকতা যে কোনদিনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তার জীবন্ত উদাহরণ হুগলির চুঁচুড়ার রাহুল। রাহুলের জীবন সংগ্রামের লড়াই খুবই প্রশংসনীয়। নতুন বছরের রাহুলের মতন সংগ্রামী ছেলেদের কুর্নিশ নেটিজেনদের।