
৯৯ ডিজিটাল ডেস্ক, দুর্গাপুর : এ তো ভারি অদ্ভুত , অনেকটা চোরকে বলা চুরি করতে আর গৃহস্থকে বলা ঘর সামলাতে। রসগোল্লা আর ডায়াবেটিস দিবস একই দিনে ! বিশপ লেফ্রয় রোডের দীর্ঘদেহী থাকলে এই রহস্য উন্মোচনে তাঁর অমর সৃষ্টি লালমোহন বাবুকে অন্তত তিনবার “হাইলি সাশপিসাস” বলিয়ে ফেলতেন। প্রদোষ মিত্র ও নিশ্চয়ই চারমিনারের ধোঁয়া উড়িয়ে অন্তত একবার বলেই ফেলতেন “সাবাস তোপসে”। তবে “সে রাম ও নেই , অযোধ্যাও নেই”।
বাঙ্গালী টানটান একটা থ্রিলার থেকে নিশ্চিত ভাবে বঞ্চিত। আপাতত বাঙ্গালী ডায়াবেটিকস কে “মারো গুলি” করে রসে থুড়ি রসগোল্লায় নিমজ্জিত। শহর জুড়ে কত বিচিত্র রসগোল্লার কারিকুরি। এতদিন নানান রঙের রসগোল্লা তো ছিলই , এবার নিতান্ত নিরীহ বাদামের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে দিয়েছে শহরের নামজাদা ময়রারা। “কাঁচা বাদাম” কাকুর ব্র্যান্ডকে রসগোল্লার সাথে জুড়ে এক ঐতিহাসিক বিপ্লব নামিয়ে ফেলেছেন । আর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসে কাঁচা বাদাম রসগোল্লা এখন টক অফ দ্য টাউন।

কিন্তু হঠাৎ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দিষ্ট করা দিনের সাথে একেবারে উল্টো পথিক রসগোল্লা কি করে জুড়ে গেল ? এই ডায়াবেটিস নামক বেয়াড়া রোগের আবিষ্কার তো সেই ৫/৬ এর শতকে , তখনও যীশুখৃষ্ট জন্মগ্রহন করেননি । সেই সময়ের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরা প্রথম আবিষ্কার করলেন মুত্রও মিষ্টি হয়। সময়টা ১৫৫০(বিসি), ব্যাস শুরু হয়ে গেল “মধুমেহ” রোগের পরিক্রমা। সেই পরিক্রমায় ১৯৯১ সালে এসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ট্যাগ লাগাল যে প্রতি বছর ১৪ই নভেম্বর বিশ্ব জুড়ে পালিত হবে ডায়াবেটিক দিবস।

তারপর ফি বছর কত গালভরা আলোচনা এই দিনকে ঘিরে। কিন্তু তাতে কি ? দিবস টিবস করেও বাঙ্গালীর মিষ্টিপ্রেমকে কখনও পেছনে ফেলতে পারেনি। তাইতো বাঙ্গালীর প্রিয় “বনফুল” একহাতে ইনসুলিন নিতেন , অপর হাতে জিলাপী খেতেন। এই অব্দি তো ঠিকঠাকই চলছিল। তাহলে হঠাৎ করে রসগোল্লা কি ভাবে এই দিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে কলা দেখিয়ে জুড়ে বসল ?

রসগোল্লা তুমি কার ? এই নিয়ে উৎকল-বঙ্গের চিরন্তন লাঠালাঠি । বাংলার মিষ্টি মানুষ নবীন চন্দ্র দাসই যে রসগোল্লার স্রষ্টা , মনে প্রানে বিশ্বাস করে দীঘা থেকে দার্জিলিং । তাঁরই সুযোগ্য সন্তান কৃষ্ণচন্দ্র দাস (কে সি দাস) তো আজ বাঙ্গালীর স্বয়নে,স্বপনে,জাগরনে । কিন্তু উৎকলবাসীও পিছু ছাড়বে না। তাদের দাবি নবীন দাসের অনেক আগেই রসগোল্লা আবিষ্কার হয়েছে , ১৫ শতকে এই রসগোল্লা জগন্নাথ দেব মা লক্ষ্মীকে অফার করে রাগ ভাঙ্গিয়েছিলেন। নবীন দাস তো ১৮৬৮ , তাহলে কি উড়িষ্যা জিতে গেল ? এই মিষ্টি বিতর্ক চলুক , আপত্তি নেই। ২০১৫ সালে বাংলার রসগোল্লার জন্য “জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন”(জি আই) এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানায় রাজ্য। এই স্বীকৃতি মেলে ২০১৭ সালের ১৪ই নভেম্বর। ব্যাস , সেদিন থেকেই এইদিন রসগোল্লা দিবস। সকাল থেকে রাত অব্দি শুধুই রসগোল্লার হল্লায় মাতোয়ারা আম আদমী । পরবর্তী কালে কত শিশি কালমেঘ বিক্রী হল , তা ওই মধুমেহ দিবসের স্রষ্টারা ভাবুক । দিবসের বিড়ম্বনায় যতই “গেরো” হোক না কেন , এইদিন শুধুই বাঙ্গালীর । তাতে একহাতে রসগোল্লা আর অন্য হাতে কালমেঘের মন্দিরা নিয়ে যতই ” দুই হাতে কালের মন্দিরা বাজুক”। ভাল থাকুন মিষ্টি বাঙ্গালী !