
৯৯ বাংলা, হুগলি কখনও বিনা, কখনও ডুগি তবলা সবই তৈরি হচ্ছে নারকেলের মালা দিয়ে। যা শুধু মাত্র দেশের মানুষে কাছে নয় বিদেশের মাটিতেও রয়েছে তার জনপ্রিয়তা। হুগলি শ্রীরামপুরের নিজের বাড়িতেই এই সমস্ত বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে তাক লাগাচ্ছেন সোমনাথ ব্যানার্জি। নারকোলের মালা দিয়ে তিনি তৈরি করছেন বিনা, তানপুরা , রাবাব, বাঞ্জ্য ডুগী তবলা, তবলা তরঙ্গ, খমক আরো কত কি।
বছর পঞ্চাশের সোমনাথ ব্যানার্জি পেশায় একজন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। সংগীতের চর্চা তার শেখা তার বাবার থেকে। তবে তিনি কোনদিনও ভাবেননি নারকেলের মালা দিয়ে বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে তা তিনি দেশে-বিদেশে বিক্রি করবেন। বেসরকারি সংস্থা কর্মরত হওয়ার দরুন তিনি সঙ্গীত থেকে অনেক দূরেই চলে গিয়েছিলেন বলা চলে। তবে সাপের বর হয়ে দাঁড়ায় করোনা। মহামারীর সময় যখন সবাই গৃহবন্দী তখন একদিন বাজারে গিয়ে নারকোলের মালা দেখে তার মনে হয় সেই মালা দিয়ে খুব ভালো মিনিয়েচার ঢোল বানানো যাবে। সেই থেকেই শুরু। তারপর আস্তে আস্তে একের পর এক ধাপ পেরিয়ে তিনি তৈরি করতে শুরু করেন বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের মিনিচার রূপ। বর্তমানে তিনি এই মিনিচার যন্ত্র বানাতে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বাধ্য হয়ে তাকে তার চাকরি ছাড়তে হয়েছে। সোমনাথ মুখার্জির হাতে তৈরি বাদ্যযন্ত্রের মিনিচার রূপগুলির ছবি তিনি সোশ্যাল মিডিয়া মারফত পোস্ট করতেই শুরু হয় তার বাণিজ্যের প্রসার। খরিদ্দাররা তার হাতের তৈরি যন্ত্র দেখে আপ্লুত হয়ে তার কাছে সেগুলি অর্ডার দেন। শুধু দেশের মাটি নয় বিদেশের মাটিতেও রয়েছে সোমনাথ মুখার্জির হাতে তৈরি শিল্পকলার। অস্ট্রেলিয়া আমেরিকা কানাডা লন্ডন এর মতন বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রবাসী বাঙালিরা সোমনাথ বাবুর কাছে অর্ডার দেন ঘর সাজানো বাদ্যযন্ত্র বানানোর।
শুধুমাত্র শাস্ত্রীয় সংগীতের সঙ্গে যুক্ত বাদ্যযন্ত্রই তিনি কেন বানান সেই প্রশ্নের জবাবে সোমনাথ মুখার্জি বলেন, তিনি একটি বার্তা দেওয়ার জন্য শাস্ত্রীয় সংগীতের বাদ্যযন্ত্রের অনুকরণ তৈরি করেন। তিনি বলেন, একটা সময় ভারতের মাটিতেই বহু মানুষ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের যন্ত্রপাতি নিয়ে চর্চা করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে পাশ্চাত্যের ছোঁয়া লাগার পরে মানুষের কাছ থেকে দেশীয় জিনিস হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই তার বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে দিয়ে তিনি এই বার্তা দিতে চান দেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের বাদ্যযন্ত্র এখনো রয়েছে। নতুন প্রজন্ম যদি তার দিকে না ঝোঁকে তাহলে একসময় অবলুপ্তির পথে এগোবে সেগুলি। তাই তিনি শাস্ত্রীয় সংগীতেরই বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেন যাতে সাধারণ সংগীত প্রেমী মানুষের শাস্ত্রীয় সংগীতের বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহ জন্মায়।