
৯৯ ডিজিটাল ডেস্ক , দুর্গাপুর : “কুকুরের কাজ কুকুর করেছে , কামড় দিয়েছে পায়ে, তা বলে কুকুরে কামড়ান কিরে মানুষের শোভা পায় “? সেই কবে কবি সত্যেন্দ্রনাথ বলে গিয়েছিল, অনেকদিন পর হঠাৎই খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ল। বিষয়টা যে একেবারেই শোভিত নয় , এ বিষয়ে সন্দেহ নেই কারোর! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে , কুকুর তো কামড়ায় নি , তাহলে হঠাৎ কবির অমর সৃষ্টির লাইন উদ্ধৃত করতে হচ্ছে কেন এই অধমকে ? এর ব্যাখ্যাটা কিন্তু খুব প্যাঁচালো! এখানে “উত্তম” এর মতন “অধম” ও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক । চিত্রনাট্যের শুরুয়াত ইস্পাত কলোনীর নিউটনে এক ব্যক্তির এয়ারগান থেকে গুলি চালিয়ে এক অন্ত:সত্বা সারমেয়কে হত্যা করা থেকে। এরপর যথারীতি কালের নিয়মে পশু প্রেমী সংগঠন থেকে সাধারন মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদ,অভিযোগ দায়ের ইত্যাদি। আইনরক্ষকও যথারীতি আইন পালন করে তাকে ধরে আপাতত ৩ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। উটকো “অশান্তি” ঘনিয়ে এসেছে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ওই কর্মচারীর জীবনে। পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে “ঘাতক” এয়ারগানটি। পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি হাঁফ ছেড়েছে তাদের বিক্ষোভ ফলপ্রসু হয়েছে।

কিন্তু এতেই কি সমস্যার সমাধান কিছু হল বা হবে ? সোজা সাপ্টা উত্তর হল, হবে না। কারন এই সমস্যার সমাধান যারা করতে পারে অর্থাৎ সরকার বাহাদুর , সেখানেই ঘাটতি। সমস্যা হল , পথ কুকুরদের লাগাতার বংশ বৃদ্ধি রোধ ও জলাতংকের টীকাকরন। এই দুটো প্রক্রিয়াই যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ এবং এতে সরকারী উদ্যোগ নেই বললেই চলে , ফলে লাগাতার সারমেয় বৃদ্ধি একটা বৃহৎ অংশের মানুষের কাছে বিরক্তির কারন। এক বেসরকারী এনজিওর কর্নধার চন্দন গুঁই খরচের হিসেবটা জানালেন । একটা জলাতংকের টীকার দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। একটি সারমেয়কে প্রথম বছর দুটি টীকা দিতে হবে , তারপর ফি বছর একটি করে। কিন্তু এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া । এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়া চালাতে গেলে প্রয়োজন অর্থের , কিন্তু সেই অর্থ বরাদ্দ নেই। দুর্গাপুর নগর নিগমের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হলেও তা সংখ্যায় অপ্রতুল , ফলে একটি এলাকায় ২০টি সারমেয়কে টীকা দিলেও বাকি গুলি না পেলে সংক্রমন ছড়িয়ে যাবে, আখেরে তাতে কোন লাভ হবে না।

এরপর রয়েছে স্টেরেলাইজেশন , অর্থাৎ বন্ধ্যাত্বকরন। একটি মা সারমেয়র বন্ধ্যাত্বকরনের খরচ প্রায় ১৫০০/-। অর্থাৎ বিপুল পরিমান অর্থের প্রয়োজন, কিন্তু প্রানী সম্পদ উন্নয়ন বিভাগের পক্ষ থেকে সেই অর্থে নেই কোন বরাদ্দ। পশ্চিম বর্ধমান জেলার ডেপুটি ডিরেক্টর ড: অনির্বান ঘোষ এই ইস্যুতে নিজের হতাশা ব্যক্ত করলেন। তিনি জানান যে প্রতিবছর ২৮ শে সেপ্টেম্বর ডা: লুই পাস্তুরের জন্মদিন বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস হিসেবে পালন করা হয় ঠিকই , কিন্তু সেক্ষেত্রে সরকারী অর্থ বরাদ্দের পরিমান এত কম যে লিফলেট ছাপাতেই সেই অর্থ শেষ। কুকুরের নির্বীজকরনের ক্ষেত্রেও সেইভাবে কোন সরকারী স্কিম নেই , জ্যামিতিক হারে কুকুরের বৃদ্ধি হয় , অর্থাৎ একটি মা কুকুর একসাথে ৩ থেকে ৫ টা বাচ্চার জন্ম দেয় , ফলে বছর বছরই শহর জুড়ে সারমেয় সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। একে নিয়ন্ত্রন করার কোন উপায় আপাতত নেই বলেই অভিমত ডা: ঘোষের। তবে এয়ারগান চালিয়ে সারমেয় হত্যার তীব্র নিন্দে করে একে ” নৃশংসতা” আখ্যা দিলেন এই বিখ্যাত পশু চিকিৎসক।
এ্যানিম্যল ওয়েলফেয়ার বোর্ড অফ ইন্ডিয়া , কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন , রাজ্যের চ্যাপ্টারের সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে থাকে। তাহলে পথ সারমেয়দের জন্য কেন নেই কোন উদ্যোগ ? নাকি সারমেয়দের পেছনে টাকা ঢাললে আখেরে ভোটবাক্সে কোন লাভ হবে না ,সেটাই প্রতিষ্ঠিত ? কিন্তু ঘুরিয়ে দেখলে তো নাগরিক পরিষেবারই অঙ্গ এই প্রক্রিয়া। সারমেয় সংখ্যাবৃদ্ধি কিংবা জলাতংক তো আখেরে জনজীবনকেই প্রভাবিত করছে। গনতন্ত্রের ধারক ও বাহকরা কিছু বলবেন নাকি এ ব্যাপারে ?