
৯৯ ডিজিটাল ডেস্ক , দুর্গাপুর : মেলা মানেই যে শুধু ঝালমুড়ি,ফুচকা,নাগরদোলা কিংবা উঠতি প্রেমিক যুগলের দেখা করার আদর্শ “ভেনু” , তা কিন্তু নয়। এই মেলার পরতে পরতে নানা রহস্যের গল্পগাথা। বলছিলাম , কল্পতরু মেলার কথা ,প্রতি বছরের প্রথম দিন যার “ওম গনেশায় নম :” হয়,চলে অফিসিয়ালি ১০দিন, ভাঙ্গা মেলা আরও প্রায় ১০ দিন। “হরেক মাল চার আনা” র আমল থেকে শুরু হয়ে এখন বিশ টাকায় পৌঁছেছে মেলার বয়স। একসময় দুর্গাপুর প্রোজেক্টের পৃষ্ঠপোষকতায় তৎকালীন “লালপার্টি”র অনুমোদনেই চলত মেলাকমিটি। স্বাভাবিকভাবেই কমিটিতে আধিক্য ছিল “কমরেড” দের। ২০১১য় রাজ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের পাশাপাশি কালের নিয়মেই মেলার ক্ষমতাও হস্তান্তর হয়ে যায়। দায়িত্বে চলে আসেন ঘাসফুলের নেতারা। যারা বরাবর ডিপিএল দাপিয়ে এসেছেন, তারাই এ মেলাতেও দাপাতেন, সে লালই হোক বা সবুজ। মুলত নানান শ্রমিক নেতা ও অনুগামীদের আধিপত্য বজায় থেকেছে মেলা জুড়ে। সেই মেলারই নতুন কমিটির ঘোষনা হল এদিন।
সবুজ আমলে কখনও শ্রমিক নেতা দেবদাস মজুমদার,মৈনাক মজুমদারদের কিংবা আলোময় ঘড়ুইদের হাতেই আবর্ত হয়েছে মেলার রাশ। মেলা ঘিরে শাসকের গোষ্ঠীদ্বন্দ উঠে এসেছে সংবাদ শিরোনামে। যতই আলো জ্বলেছে মেলায়,ততই “মুচমুচে” রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে গ্যামন ব্রিজের ময়দান। বাম আমলের কল্পতরু,দুর্গাপুর সাংষ্কৃতিক মেলায় পরিনত হয়ে ফের সবুজের আমলে কল্পতরু নাম জুড়েছে।
কিন্তু , সেতো গেল মেলার কথা , মেলার নেপথ্যের “খেলা”র চর্চা কিন্তু শহরের রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়েছে , যা আজও অব্যাহত। বারংবার মেলা কমিটির পরিবর্তন একাধারে বিস্ময় ও রহস্যের জন্ম দিয়েছে। ২০২০ সালে তৎকালীন শহরের প্রথম ব্যক্তি (মেয়র) দিলীপ অগস্তি সাহেবের হাত ধরে দুর্গাপুর নগর নিগম এই মেলার রাশ নিজেদের হাতে নিল। অভিভাবক নগর নিগমের হাত ধরে ফের নতুন কমিটি হল , ২০২০-২০২২ মেলা পরিচালনা করল সেই কমিটি। দিলীপ বাবু মেয়র পদ থেকে সরে গেলে , অনিন্দিতা মুখার্জী সেই পদে আসীন হন এবং বোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্নকালে তিনিই প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন। তার হাত দিয়েই মঙ্গলবার ফের একবার নতুন মেলা কমিটির ঘোষনা হল। নতুন কমিটির শীর্ষ দায়িত্বে রয়েছেন দুই মন্ত্রী, মলয় ঘটক ও প্রদীপ মজুমদার। পদাধিকার বলে সভাপতি খোদ অনিন্দিতা মুখার্জী, উপদেষ্টা কমিটিতে রয়েছেন আইএনটিটিইউসি র জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক,এডিডিএর ভাইস চেয়ারম্যান কবি দত্ত,সাধারন সম্পাদক বিশিষ্ট সমাজ সেবী বিপ্লব বসু ঠাকুর(যিনি আগেও ছিলেন),কোষাধক্ষ্য প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা আইএনটিটিইউসি নেতা দীপঙ্কর লাহা প্রমুখ। অর্থাৎ শহরের ক্ষমতার ধ্বজাধারীরাই বারে বারে ফিরে এসেছেন কমিটির কেন্দ্রস্থলে ।
অনিন্দিতা দেবী জানান ,” সব নিয়মনীতি মেনে বিগত বছরগুলির মতই এবারও জাঁকজমক পুর্ন মেলা হবে,তার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে”। দীপঙ্কর লাহা জানালেন যে বিগত বছরগুলিতে যেভাবে মেলা হয়েছে,এবার তার থেকেও ভাল করার লক্ষ্য রয়েছে তাঁদের”। উপদেষ্টা অভিজিত ঘটক জানান যেহেতু ডিপিএল এলাকায় মেলা,তাই ডিপিএল কর্মী ও বিগত কমিটির কয়েকজনকে নিয়ে একটি সাব কমিটি গঠন হবে মেলা পরিচালনার জন্য। স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য স্টলের দাম নির্ধারনে ব্রোসিওর প্রকাশ করা হবে”।
বিগত দিনে এই “স্বচ্ছতা” নিয়ে বারংবার প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। শোনা যায়, সে কারনেই নাকি তৎকালীন মেয়র দিলীপ অগস্তির নেতৃত্বে মেলার দখলদারি যায় নগর নিগমের হাতে। সুত্রের খবর,২০২০ ও ২০২১ এ মেলা কমিটি নগরনিগমের হাতে যথাক্রমে ১০ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা ও ১২ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিল। ২০২২ এ সেই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ লক্ষ,কিন্তু কোভিডের কারনে পাঁচ দিন চলার পর মেলা বন্ধ হয়ে যায়। এবারে গত কমিটির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ লক্ষ, কিন্তু তার আগেই বদলে গেল কমিটি। নতুন কমিটি নগরনিগমের রাজকোষ কতটা ভরাতে পারবে , তা অবশ্যই সময় বলবে । কিন্তু গত কয়েক বছরে একাধিকবার কমিটি পরিবর্তন , কমিটি ঘিরে নিত্য নতুন তরজায় প্রতি শীতেই গায়ে রাজনৈতিক উত্তাপের ওম মেখেছে শহরবাসী। রাজনীতির রঙ কখনই পিছু ছাড়েনি এই ঐতিহ্যবাহী মেলার। এবারও যার ব্যতিক্রম হল না।