
কৌশিক বসু,দুর্গাপুর : আইপিএল কে ঘিরে বেটিংয়ের অভিযোগে দুর্গাপুরের মেনগেট অঞ্চলের নিউ ষ্টীল পার্ক থেকে মহ: নিয়াজ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করল দুর্গাপুর থানার পুলিশ। ধৃতকে শুক্রবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে চার দিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ। ধৃতের কাছ থেকে পুলিশ চারটি মোবাইল ফোন, দুটি ডায়েরী ও নগদ ৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। এ কথা জানিয়েছেন ডিসি (পূর্ব) কুমার গৌতম।
বৃহস্পতিবার ছিল আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রাজস্থান রয়েলসের ম্যাচ। ম্যাচ শুরু হতেই চালু হয়ে যায় বেটিং। বেটিং অ্যাপ এর লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ হাতেনাতে ধরে ফেলে মহ: নিয়াজকে। দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশের কাছে খবর ছিল এই বেটিং চক্রের। বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালায় দুর্গাপুর থানার পুলিশ।
ধৃত নিয়াজকে শুক্রবার আদালতে পেশ করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে জনৈক “ছোটকার” নাম উল্লেখ করে সে। ধৃত ব্যক্তি জানায় যে ছোটকা পয়েন্ট দেখতো।

কে এই ছোটকা? এক্ষেত্রে “পয়েন্ট” ই বা কি ? জানা যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরেই আইপিএলকে ঘিরে দুর্গাপুরে ক্রমাগত সক্রিয় হয়ে উঠেছে বেটিং চক্র। জানা গেছে এই জুয়া চক্রের দুর্গাপুরে মাস্টারমাইন্ড ছোটকা। শহরের বিভিন্ন এলাকায় পয়েন্ট তৈরী করে সেখানে নিজের এজেন্ট কে দিয়ে এই বেটিং চক্র চালাত সে। মেনগেট , বেনাচিতি,ইস্পাত কলোনীর কনিষ্ক , মায়াবাজার ইত্যাদি বহু জায়গায় ছিল এই পয়েন্ট। এই সব পয়েন্টে থাকত তার নিজস্ব লোকেরা। বিগত কয়েক বছরের মধ্যেই সে এই বেটিং চক্রের মাথা হয়ে ওঠে। আইপিএল চলাকালীন প্রতিদিনই সক্রিয় হয়ে ওঠে বেটিং চক্র। মোবাইল এ্যাপের মাধ্যমে খেলা হয়। নির্দিষ্ট ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে এই এ্যাপে প্রবেশ করা যায়। এভাবে গোটা শহরের এক বড় অংশের মানুষের মধ্যে এই বেটিং ছড়িয়ে দিতে সক্ষম ও হয়েছিল চক্রীরা। প্রতিদিন প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা মুনাফা হত চক্রের মাথাদের। ফলে গত কয়েকবছরের মধ্যে বেটিং কারবারীদের জীবনযাত্রার মানও উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তন হয়েছিল। ছুটি কাটাতে এরা হামেশাই পাড়ি জমাত মালয়েশিয়া,থাইল্যান্ড,ফুকেট ইত্যাদি স্থানে। সুত্রের খবর বেনাচিতির কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির হাত রয়েছে ছোটকা সহ এই চক্রের মাথাদের ওপর। মুলত ওই প্রভাবশালীদের বদান্যতায় দিনে দিনে ফুলে ফেঁপে উঠেছে বেটিং চক্র। এক শ্রেনীর মানুষ যেমন এই বেটিংএর চক্করে সর্বশ্রান্ত হয়েছে , তেমন পকেট ভারী হয়েছে বেটিং কারবারী সহ প্রভাবশালীদেরও।
মুলত দুটি ভাবে খেলা হয় এই বেটিং। এক তো সরাসরি ম্যাচের ওপর লগ্নী করে। ম্যাচের আগেই নিজ পছন্দের নির্দিষ্ট টিমের ওপর বাজী রেখে চলে বেটিং। বেটিং এর লগ্নীমুল্য আগেই জমা করতে হয় নির্দিষ্ট এ্যাকাউন্টে। পুরোটাই চলে বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে। জিতলে ততক্ষনাৎ টাকা চলে আসে গ্রাহকের এ্যাকাউন্টে। আর দ্বিতীয়ত যেটা হয়,সেটা একটু উঁচু লেভেলের। কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন মহানগরগুলিতে সাট্টার মাস্টারমাইন্ড দ্বারা পরিচালিত হয় এই বেটিং , যেখানে নির্দিষ্ট ওভার বা নির্দিষ্ট বল-এ কি ঘটবে তার ওপর বাজি ধরা হয়।

পুলিশ সুত্রের খবর , ধৃতের কাছ থেকে “ছোটকা” সহ একাধিক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে , যাদের মাধ্যমে দুর্গাপুরে এই বেটিং চক্রের জাল বিছানো হয়েছিল। যুব সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশকে এই নেটওয়ার্কে সামিল করা হয়েছিল। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের শেকড় পর্যন্ত পৌঁছাতে চাইছে পুলিশ। এর পাশাপাশি কোন কোন প্রভাবশালীরা এই বেটিং চক্রের মদতদাতা , পুলিশের র্যাডারে তারাও নিশ্চিত ভাবে আসতে চলেছে বলেই সুত্রের খবর।