
৯৯ ডিজিটাল ডেস্ক,দুর্গাপুর : অঙ্কই ছিল ধ্যান জ্ঞ্যান , কিভাবে জটিল ফর্মুলাকে সহজ করে ছাত্রছাত্রীদের বোধগম্য করে তোলা যায় , তা ভেবেই কাটত জীবন।
গত কয়েক দশকে কত হাজার ছাত্রছাত্রী যে তাঁর শিক্ষাদানে সফলতার সোপান উত্তীর্ন হয়েছে , তার ইয়ত্তা নেই, সংখ্যাটা ৬০০০ এর ও বেশী। হ্যাঁ, তিনিই আশুতোষ ঘোষাল , গত রাতে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যাঁর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে দাবানলের মতন এই খবর ছড়িয়ে পড়ে শহর জুড়ে। এই শহরে বর্তমানে প্রায় ৪০০ র কাছাকাছি তাঁর ছাত্রছাত্রী সংখ্যা। অভিভাবক ও ছাত্র মহল কার্যত হতবাক তাঁর এই আকস্মিক প্রয়ানে। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার র মেটিরিয়াল হ্যান্ডেলিং প্লান্টের সিনিয়র টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত হলেও আজীবন অঙ্ক শেখানোর নেশাতেই পেয়ে বসেছিল তাঁকে। মুলত ইংরাজী মাধ্যমের সিবিএসই ও আইসিএসই বোর্ডের পাঠরত দশম শ্রেনী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের অঙ্ক শেখাতেন তিনি। “অঙ্কে কাঁচা” , এমন অনেক ছাত্রছাত্রীকেই তিনি পারদর্শী করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। অর্থাৎ জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার আগে ছাত্র ছাত্রীদের ভিত মজবুত করাই ছিল আশুতোষ বাবুর জীবনের মুল লক্ষ্য। ওনারই এক ছাত্রী শ্রেয়সী সাহার বাবা সুজয় সাহা ধরা গলায় জানালেন,” এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর , কি অমায়িক ব্যবহার , তেমনই ছাত্রছাত্রীদের প্রতি যত্নশীল,ওনার ২৪ ঘন্টাই ফোন খোলা থাকত , যে যখন ফোন করত প্রয়োজনে , তিনি উত্তর দিতেন এবং ফোনেও না বোঝা ফর্মুলা সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিতেন , এমনই দক্ষতা ছিল তাঁর”।
গত পরশুও তাঁর কাছে অঙ্ক শিখে এসেছে দশম শ্রেনীর ছাত্রী শীর্ষা সেন। বাবা বিকাশ সেন জানালেন ,”মেয়েকে এখনও এই সংবাদ জানাতে পারিনি , জানি না মেয়ে কিভাবে রি এ্যাক্ট করবে” । এদিন সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই অভিভাবকদের একাংশ জড় হতে থাকেন আশুতোষ বাবুর বঙ্কিম চন্দ্র এ্যাভিনিউর বাড়ীর সামনে। প্রত্যেকেরই একই কথা , অপুরনীয় ক্ষতি হয়ে গেল। অভিভাবক সুত্রেই জানা গেল যে একমাত্র সন্তান পুনেয় কর্মরত। বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে রওনা দিয়েছেন। সম্প্রতি ছেলের বিয়ে ঠিক করেছিলেন এবং সেজন্য বাড়ীর কাজও করাচ্ছিলেন।
শহর দুর্গাপুরে “ঘরে ঘরে ডিএসপি কর্মী” একসময় মুলমন্ত্র ছিল। তারই অঙ্গ হিসেবে দুর্গাপুর ইস্পাতে কাজে যোগদান করেছিলেন “অঙ্কের ভগবান”।যদিও এর খুব প্রয়োজন ছিলনা বলেই অভিমত অভিভাবকদের । সম্প্রতি দু-একজন ঘনিষ্ঠ অভিভাবকের কাছে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথাও জানিয়ে ছিলেন এবং আরও বেশী করে ছাত্রদের প্রতি মনোযোগী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সেই চাকরিই আখেরে “কাল” হল তাঁর। কোন গাফিলতিতে ঘটল এত বড় দুর্ঘটনা , সে খোঁজ ইস্পাত কতৃপক্ষ কিভাবে নেবে , সেটা তাদের আভ্যন্তরীন বিষয়। কিন্তু এই দুর্ঘটনা যে শত শত ছাত্রছাত্রীকে অভিভাবকহীন করে দিল , তা বলাই বাহুল্য। আজীবন সফল ভাবে অঙ্কের হিসেব মিলিয়ে আসা মানুষটা জীবনের হিসেব মেলাতে গিয়েই হোঁচট খেলেন আর শিল্প শহর হারালো এক প্রতিভাবান অঙ্কপাগল নিষ্ঠাবান শিক্ষককে।