
কৌশিক বসু,দুর্গাপুর : কেউ ৩০ , কেউ ৪০ হাজার, গরীব মানুষের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছিল স্থানীয় তৃণমূলী “দাদা” রা , পরিত্যক্ত সরকারী আবাসনে থাকতে দেওয়ার নাম করে। এখন সংস্থা আবাসন খালি করার নোটিশ দিতেই ফাঁপরে হত দরিদ্র পরিবার এবং সেই “দাদা”রা উধাও। দায় এড়াচ্ছেন “দাদা”দের “দাদা” প্রাক্তন কাউন্সিলরও। অথচ কাউন্সিলরের ছত্রছায়ায় থেকেই নাকি সরকারী আবাসনে এককালীন টাকা নিয়ে লোক বসাচ্ছিল দাদা-রা , অভিযোগ দরিদ্র পরিবার গুলির। এর দায় তৃণমূল নেবে না , নিতে হবে তাদের , যারা টাকা নিয়েছে , সাফ জবাব তৃণমূল নেতৃত্বের। গোটা ঘটনাটি রাজ্য সরকারের অধীনস্থ দুর্গাপুর প্রোজেক্ট লিমিটেডের কলোনীর।
কেউ পুরোহিত , কেউ বা গাড়ীর ড্রাইভার , কেউ বা সব্জি বিক্রেতা , এদের কেউই কোনদিন ডিপিএল এ কাজ করে নি। অথচ এরা বসবাস করে ডিপিএলের পরিত্যক্ত ফাঁকা আবাসনে। তবে তার জন্য পরিবার পিছু মোটা অংকের গ্যাঁটের কড়ি খসাতে হয়েছে এবং সেই টাকা গেছে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী লক্ষন লামা,বিশু , বাবু নামক দাদাদের কাছে,এমনই অভিযোগ। এই আবাসিকদের অনেকেই কানের গয়না , হাতের চুড়ি বিক্রী করে দাবিমত টাকা জুগিয়ে ঢুকেছিলেন ডিপিএল আবাসনে। কিন্তু ডিপিএল কতৃপক্ষ সম্প্রতি একটি নোটিশ জারি করে এবং তিন দিনের মধ্যে আবাসন খালি করার নির্দেশ দেয়, কারণ আবাসন গুলি ভেঙে ফেলা হবে। হত দরিদ্র পরিবারগুলি যথারীতি পড়ে ফাঁপরে। যাদের টাকা দিয়েছিল , তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা দায় এড়িয়ে যায়। ডিপিএলের কাছে দিনকয়েক সময় চাইলেও সেখানেও প্রত্যাখ্যাত হয় বাসিন্দারা। ফলে ঘটি-বাটি হারিয়ে এখন হা-হুতাশ সঙ্গী দরিদ্র পরিবার গুলির।

এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর সুভাষ মজুমদারও মেনে নেন যে যাদের বিরূদ্ধে অভিযোগ , তারা তৃণমূলের মিটিং মিছিলে হাঁটত। কিন্তু তারা যে এই কাজ করেছে , তার দায়িত্ব তিনি নেবেন না বলেই জানান প্রাক্তন কাউন্সিলর। তিনি আরও বলেন যে ইতিমধ্যেই তিনি জেলা নেতৃত্ব সহ ডিপিএল ও পুলিশকে এই বিষয়ে জানিয়েছেন। বেশ জোরের সাথেই সুভাষ মজুমদার বলেন যে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এরা কেউ টাকা তোলেনি।
তৃণমূল নেতা উত্তম মুখার্জী সাফ জানিয়ে দেন যে দল কোনভাবেই এই কাজের রেয়াত করবে না এবং এর দায়ও দল নেবে না ।

গোটা ডিপিএল কলোনীর বহু জায়গাতেই দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিনিময়ে ফাঁকা আবাসনের অবৈধ দখলদারী চলছিল। এবার ডিপিএল উদ্যত হয়েছে দখলদারী মুক্তের। সেইমত নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিপিএলের জনসংযোগ আধিকারিক স্বাগতা মিত্র। নির্দিষ্ট দিনে নিয়ম মেনেই উচ্ছেদ হবে বলে জানান তিনি। কে কাকে টাকা দিয়েছে , তার দায় ডিপিএলের নয় বলে মন্তব্য করেন এই আধিকারিক।

স্বভাবতই এই ঘটনায় শাসক দলকে একহাত নিয়েছে বিরোধীরা। সিপিআইএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার বলেন অবিলম্বে এই টাকা ফেরত দিতে হবে তৃণমূলকে। গত তিন বছর ধরে এই অভিযোগ সর্বস্তরে করে আসছে সিপিআইএম ,জানান তিনি।তিনি আরো অভিযোগ করেন যে ডিপিএল আধিকারিকদের ও পুলিশের একাংশের সাথে জোট করেই এই টাকা তুলেছে তৃণমূল নেতারা। ডিপিএলের জিটি টাইপেও অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছে পুলিশ ও তৃণমূলের একাংশ,অভিযোগ এই বাম নেতার।
দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই বলেন যারা টাকা নিয়েছে ,তাদের বাড়ি ঘেরাও করুক জনতা, বিজেপি সঙ্গে থাকবে। তিনি আরো বলেন যে শুধু ডিপিএল নয়, দুর্গাপুর ইস্পাত, ডিভিসি ,এমএএমসি সর্বত্রই আবাসন দখল করে ভাড়া খাটাচ্ছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
চলতি বছরেই রয়েছে দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচন। নির্বাচনে এই ইস্যু যে বিরোধীদের হাতিয়ার হবে তা বলাই বাহুল্য।