
কৌশিক বসু , দুর্গাপুর : স্যার এ্যালবার্ট আইনস্টাইনের যুগান্তকারী আবিষ্কার e=mc^2 , যা তিনি জনসমক্ষে এনেছিলেন ১৯০৫ সালে। এই সুত্রে সমমানের শক্তিকে ভর ও আলোর গতির গুনফল হিসেবে গননা করা যেতে পারে। কিন্তু এই যুক্তি মানতে রাজী নন বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডা: সুভাষ সরকার। তিনি দাবি করেছেন যে আইনস্টাইনের অনেক আগেই ভারতবর্ষে এই ফর্মুলা(সুত্র) আবিষ্কৃত হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি একটি সংষ্কৃত শ্লোক উদ্ধৃত করে এর সপক্ষে যুক্তি খাড়া করেন। বর্তমানের কেন্দ্রের সরকার শিক্ষায় গৈরিকীকরন করছে,বিরোধীদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন যে ,”এতদিন পর্যন্ত শিক্ষাকে অন্যপথে চালিত করা হয়েছে , রামধনু কে রঙধনু করেছে , আমাদের যা সংষ্কৃতি তাতে মাসিমা বলে এসছি , সেখানে খালাম্মা বলছে, জবরদস্তি একটি সংষ্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা হয়েছে এতদিন “। এই পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি বলেন আইনস্টাইনের অনেক আগেই ভারতে পদার্থ ও শক্তির সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে, এটা কখনই শিক্ষার গৈরিকীকরন নয় বলে দাবি কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর।
দুর্গাপুরের এন আইটিতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তাঁর এই মন্তব্যকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে শিল্পাঞ্চলে। দুর্গাপুরের বিজ্ঞানের বিশিষ্ট শিক্ষক নুরুল হক বলেছেন, কোন ধর্মগ্রন্থের দর্শনে বর্নিত থাকতেই পারে এ তথ্য, কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত ভাবে যা গোটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতিলাভ করেছে,অর্থাৎ আইনস্টাইনের এই থিয়োরি , সেটাকেই মান্যতা দিতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আইনস্টাইনের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের থিয়োরিই শেখাতে হবে ছাত্রদের। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে বাংলা ভাষা সংষ্কৃত , আরবী,ফারসি ইত্যাদি বহু ভাষার শব্দ নিয়েই সমৃদ্ধ হয়েছে ও এগিয়ে চলেছে , সেখানে কেউ খালাম্মা,কেউ ফুফা,কেউ মাসি বলবে , সবটাই গ্রহন করে এগিয়ে যেতে হবে।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় রাজনৈতিক মহলে। বিশিষ্ট সিপিআইএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার বলেন ,” এটা আরএসএসের এজেন্ডা , তাই এই কথা বলেছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী , নতুন শিক্ষানীতির নামে শিক্ষাকে বেসরকারীকরন , গৈরিকীকরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার”। “শুধু আইনস্টাইনই নয় , ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্বকেও অস্বীকার করে এরা , তাই সিবিএসইর পাঠ্যক্রম থেকে একে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এনসিই আর টি”,মন্তব্য বাম নেতার। তাঁর কটাক্ষ,” ডারউইনের বিবর্তনবাদে বানর থেকে মানুষ যে হয়েছে , বানরের লেজটা মেরুদন্ডের একদম শেষে ছোট হয়ে রয়ে গেছে যাকে জীবন বিজ্ঞানের ভাষায় ককসিস বলা হয়, আমাদের দুর্ভাগ্য যে এমন কিছু লোক দেশ শাসন করছে , যাদের লেজ এখনও ককসিসে পরিনত হয়নি,লেজই আছে”। “খালাম্মা” বিতর্কে বাম নেতার তীব্র আক্রমন ,”ওনার ভারতবর্ষের নাগরিকত্ব থাকার কোন অধিকার আছে , ওরা বি আর আম্বেদকরকে মানেনা , ওরা মুগলদের কীর্তিকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চায়,কিন্তু পাঠ্যক্রম বদলালেও ইতিহাসকে কখনও পাল্টানো যায় না”।
এই ইস্যুতে সরব হয়েছে কংগ্রেসও। কংগ্রেস জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন,” বিজেপি বরাবরই জাত-ধর্মের রাজনীতি করে এসেছে , এটা নতুন কিছু নয় , শিক্ষায় গৈরিকীকরনের পাশাপাশি বিজেপি এখন বিশেষ এক সম্প্রদায়কে ভয় পেতে শুরু করেছে , তাই বারংবার বলছে হিন্দু খতরে মে হ্যায়,কিন্তু দেশের কাছে এখন বড় খতরা নরেন্দ্র মোদী”। তিনি আরও বলেন যে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম,শিখ সহ সব সম্প্রদায়ের যে অবদান রয়েছে , তাকে কি ভোলা সম্ভব , আসলে এরা ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা অমিতাভ ব্যানার্জীও তীব্র আক্রমন শানালেন । তিনি বলেন,” আমরা হিন্দুরা বড় ভাই , সংখ্যালঘুরা ছোট ভাইয়ের মতন , তাদের খেয়াল বড় ভাই হিসেবে আমাদের রাখতেই হবে। ওনাকে (শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী) মনে রাখতে হবে কালিদাস যে ডালে বসেছিল , সে ডালকেই কেটেছিল,উনি এই মন্তব্য করে একটা জাতিকে ছোট করেছেন।” আইনস্টাইন থিয়োরি বিতর্কে তৃণমূল নেতার সাফ জবাব,” উনি পড়াশোনা জানলেও বিশদে কিছু শেখেননি , তাই এই মন্তব্য করেছেন,আদপে এরা মুখ্যু-গর্দভ,তাই এই আবোলতাবোল দাবি”।