
৯৯ ডিজিটাল ডেস্ক , দুর্গাপুর : একসময় কালে সিং নামক এক কুখ্যাত কয়লা কারবারীর হাত থেকে চেক নিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য , যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সেই পরম্পরা যে আজও অব্যাহত , তার প্রমান মিলল । সম্প্রতি দুর্গাপুরে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী,পরিদর্শন করেছেন একাধিক খনি অঞ্চল। দুর্গাপুরে একটি হোটেলে রাত্রিবাসও করেন তিনি। সেখানেই আর এক কুখ্যাত কয়লা কারবারী জয়দেব খাঁর সাথে তার ছবি এখন ভাইরাল। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই টুইট করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কুনাল ঘোষ , বাবুল সুপ্রিয় প্রমুখ। ফের একবার সমালোচনার ঝড় রাজনৈতিক মহলে। একদিকে যখন ইডি- সিবি আইয়ের মত কেন্দ্রীয় সংস্থা অবৈধ কয়লা ইস্যুর তদন্ত চালাচ্ছে , তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সাথে কয়লা মাফিয়ার ছবি স্বভাবতই আলোড়ন তুলেছে। প্রশ্ন হচ্ছে , কে এই জয়দেব খাঁ ?
পশ্চিম বর্ধমান জেলার অবৈধ কয়লা সাম্রাজ্যে যে কটি নাম ভেসে বেড়ায় , তার মধ্যে অন্যতম এই জয়দেব খাঁ বক্তারনগরের বাসিন্দা। বাম আমলেই কয়লার ব্যবসায়ে হাতেখড়ি যা অব্যহত ছিল তৃণমূল আমলেও। এক দল ক্ষমতায় থাকতে থাকতে অপর রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় চলে যাওয়া এই সব কালোয়ারদের ক্ষেত্রে আকছারই ঘটে থাকে। জয়দেবের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। ২০২০ সালের ৯ই অক্টোবর বিজেপির রাজ্য সদর দপ্তরে তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জয়দেবের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে তাকে দলে যোগদান করান। বর্তমানে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মন ঘড়ুই তখন জেলা সভাপতি,তিনিও ছিলেন সেই যোগদান মেলায়। কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রীর সাথে ভাইরাল ছবিতে বিধায়ককেও একই ফ্রেমে দেখা যাচ্ছে। অন্ডাল , রানীগঞ্জ সহ একাধিক থানায় এই ব্যক্তির বিরূদ্ধে অবৈধ কয়লার মামলা হয়ে রয়েছে। যার শেষতম মামলাটি হয়েছে অন্ডাল থানায় যার কেস নম্বর ১৪৩/২০২০। এরপরই জয়দেব বিজেপি যোগদান করে । রানীগঞ্জ থানার একটি কয়লা মামলায় দুর্গাপুরের সপ্তর্ষি পার্কে জয়দেব খাঁয়ের ফ্ল্যাটে সি আইডি আধিকারিকরা এসে নোটিশ পর্যন্ত জারি করে গিয়েছিল। তবে শুধু কয়লা নয় , খুনের মত গুরুতর অভিযোগও রয়েছে এই ব্যক্তির বিরূদ্ধে। নিজেরই কর্মচারীকে খুনের মামলায় মুখ্য অভিযুক্ত এই ব্যক্তি , এই মামলাটিও রানীগঞ্জ থানার । উল্লেখ্য , যে হোটেলে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী রাত্রিবাস করেছেন , সেটি বাম আমলেরই আর এক কুখ্যাত কয়লা কারবারি রাজু ঝায়ের , যিনিও বর্তমানে বিজেপির ছত্রছায়ায়।
বর্তমানে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল ও এই ছোঁয়াচে রোগ থেকে মুক্ত নয়। বিগত বছরগুলিতে অনুপ মাজি ওরফে লালা ও তার সঙ্গীদের অবৈধ কয়লা সাম্রাজ্যের সাথে তৃণমূল যোগের কথা প্রায়শই সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে। বিনয় মিশ্র সহ একাধিক তৃণমূল নেতার সাথে মাফিয়া যোগ নিয়ে সিবি আইয়ের অধীনে সেই তদন্ত চলছে ও একাধিক ইসিএল আধিকারিক থেকে কয়লা মাফিয়া গ্রেপ্তারও হয়েছে। সি আইডিও পৃথক ভাবে তদন্ত চালাচ্ছে অবৈধ কয়লার লেনদেন নিয়ে ।
অর্থাৎ কালে সিং থেকে অনুপ মাজি (লালা) হয়ে জয়দেব , রাজনৈতিক দলের সাথে কয়লা যোগ সুস্পষ্ট। “যে যায় লঙ্কায় , সেই হয় রাবন”,এই মিথ অবৈধ কয়লা কারবারের ক্ষেত্রে যে যথাযথভাবে প্রযোজ্য, তা বলাইবাহুল্য। দলীয় পতাকার রং পাল্টায়, কিন্তু মাফিয়া-নেতা নেক্সাসের বহর একই থাকে। যদিও এই ইস্যুতে রাজনৈতিক চাপান উতোর তুঙ্গে।
বিশিষ্ট বাম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার কটাক্ষের সুরে বলেন যে এই ধরনের কয়লা মাফিয়ারা ক্যামাক স্ট্রিট ( অভিষেক ব্যানার্জীর দপ্তর) সহ দিল্লীর সাথেও যোগাযোগ রেখে চলে কারন অবৈধ কয়লা চালাতে গেলে কেন্দ্র-রাজ্য দু জায়গা থেকেই “রিনিইউ” করাতে হয়। সেই রিনিইউ করাতেই কয়লা মন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন এই জয়দেব খাঁ, মন্তব্য বাম নেতার। তিনি আরও বলেন যে মন্ত্রীর সাক্ষাতের প্রোটোকলে সাংবাদিকরা গেটের বাইরে থাকে আর কোল মাফিয়ারা মন্ত্রীর সাথে কালো আঙুর খায়।
এই ইস্যুতে মুখ খুলেছে কংগ্রেসও। জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন যে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে কয়লা মাফিয়াদের সাথে “ফান্ডিং” সেট করতেই এসেছিলেন কয়লা মন্ত্রী এবং কয়লা মাফিয়ার হোটেলে বসেই সেই রূপরেখা ঠিক হয়েছে, নাহলে ইসিএলের সম্প্রসারনের কারনে কোনওদিন কোন কয়লা মন্ত্রীকে আসতে দেখা যায়নি । কয়লা কান্ডে সিবি আইয়ের তৎপরতা আইওয়াশ, আসল অপরাধীরা কোনদিনই ধরা পড়বে না বলে মন্তব্য এই কংগ্রেস নেতার।